খাল ও সড়কের জায়গা দখল করে রাখায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাদিক অ্যাগ্রোর দখল করা অবৈধ অংশ। এছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অভিযান পরিচালনার খবর পাওয়ার পর গত বুধবার রাত থেকেই সাদিক অ্যাগ্রোর গরু সরিয়ে নেয়া হয়েছে। খাল ও সড়কের জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে রাখা অস্থায়ী কিছু স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে সাদিক অ্যাগ্রোর লোকজন। অথচ মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে অবস্থিত রামচন্দ্রপুর খাল একসময় আপন মহিমায় বহমান ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন তা বিলীনের মুখে। দখলের কবলে পড়ে রামচমদ্রপুর খাল এখন পরিণত হয়েছে ছোট্ট নালায়। তবে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনা করছেন ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান। অভিযানে ডিএনসিসির এক্সেভেটর ও বুলডুজারসহ বিশেষ যান দিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযানে ডিএনসিসির অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পরিচ্ছন্নতা কর্মী অংশ নিয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত ছিলো। অভিযানের শুরুতে খালের অংশে দখলে থাকা অস্থায়ী স্থাপনাগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়। সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও বেশকিছু অস্থায়ী স্থাপনা এখানে গড়ে উঠেছিল, সেগুলোও উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। মূলত খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল সাদিক অ্যাগ্রোর খামার। দখলের কারণে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল সাদিক অ্যাগ্রোর অংশে একটি নালাতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সড়কের জায়গাও দখল করেছে তারা। মূলত সেই কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, সাদিক অ্যাগ্রো অবৈধভাবে খাল ও সড়কের জায়গা দখল করে আছে। তাই সাদিক অ্যাগ্রোকে উচ্ছেদ করতে গত বুধবার প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স মোতায়েন চেয়ে ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে এক চিঠি দেয়া হয়। ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম এই চিঠিতে সই করেন। সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন।
ডিএমপিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন অঞ্চল-৫ এর অন্তর্ভুক্ত মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন আশপাশের অবৈধ স্থাপনাসহ খাল ও সড়কের জায়গায় সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেডের অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিক থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোর সামনে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় এবং খালের জায়গায় থাকা বেশকিছু স্থাপনা ইতোমধ্যে সরিয়ে নিয়েছে তারা। এছাড়া গত বুধবার রাত থেকেই বেশ কিছু গরু-ছাগল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে অবস্থিত রামচন্দ্রপুর খালের একাংশ দখল করে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাগ্রোর পেছনের দিকের ছোট্ট নালাটি মনে করিয়ে দিচ্ছে খালটির কথা। অবৈধ দখলের মাধ্যমে খালটি ভরাট করায় সামান্য বৃষ্টিতে আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে জানান স্থানীয়রা। অবৈধ দখলদারিত্ব ও খাল পুনরুদ্ধার করতে সাদিক অ্যাগ্রোতে গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযান চায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
স্থানীয় বাসিন্দা রকিবুল ইসলাম বলেন, অভিযান হবে এই খবর শোনার পর সাদিক অ্যাগ্রোর বেশ কিছু গরু-ছাগল গতরাতে সরিয়ে নিতে দেখেছি। এছাড়া রাস্তার ওপরে তাদের প্যান্ডেল করা ছিল, অস্থায়ী স্থাপনা ছিল সেগুলো তারা সরিয়ে নিয়েছে। আরেক বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এখানে যে একটি খাল ছিল এটা আর দেখা যায় না অবৈধ দখলের কারণে। এটা অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। অভিযান চলবে এমন খবরে সাদিক অ্যাগ্রোসহ আশপাশের অস্থায়ী অন্যান্য স্থাপনাও নিজেরা কিছু সরিয়ে নিয়েছে। সাদিক অ্যাগ্রোর জায়গার একাংশ আব্দুর রশীদ তালুকদার নামে এক ব্যক্তির বলে দাবি করেন তার ভাই আব্দুল আলীম তালুকদার। তিনি বলেন, এখানে সাদিক অ্যাগ্রোর কোনো জায়গা নেই, তারা ভাড়াটিয়া। ১০ বছর আগে তাদের জায়গা ভাড়া দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগেও ডিসি অফিস, ভূমি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ডও এই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। তখন আমাদের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরমধ্যে আমার সাড়ে চার শতক। মাসে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া দেয়।
ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, রামচন্দ্রপুর খালের দুই ধারে যারা অবৈধ দখলদার ছিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। খালের জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে এখান থেকে উত্তর সিটির মেয়র ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়েছেন, বহুতল ভবন ভেঙেছেন। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযান। দখলদারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সাদেক অ্যাগ্রোর মালিককে ঈদের আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা থাকলে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করিনি। কারণ এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতো। আমরা এমনটা চাইনি বলে উচ্ছেদে যাইনি। সেই নোটিশের কোনো ব্যবস্থা নিইনি।
অভিযানে একজন জমির মালিক এসেছিল। সাদেক অ্যাগ্রোর মালিক বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। আর সাদেক অ্যাগ্রোকে গত ১৮ জুন নোটিশ করা হয়েছে যেন খালে বর্জ্য না ফেলে। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরা খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছি। এরপর আমরা খাল পরিষ্কার অভিযান চালাব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
* অভিযানের খবরে সাদিক অ্যাগ্রো থেকে আগেই সরিয়ে নেয়া হয় গরু * অবৈধ দখলের কারণে নালায় রূপ নিয়েছে রামচন্দ্রপুর খালটি * ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, অভিযান চলে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে
সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ অংশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ডিএনসিসি
- আপলোড সময় : ২৭-০৬-২০২৪ ১০:২২:৫৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০৬-২০২৪ ১২:৩৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্র খালের ওপর গড়ে তোলা পশু খামার সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ অংশ উচ্ছেদ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সম্প্রতি কোটি টাকার ‘অভিজাত’ গরু এবং ‘১৫ লাখ টাকার’ খাসি নিয়ে আলোচিত এ খামারের অবৈধ অংশ উচ্ছেদে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালায় ডিএনসিসি। উচ্ছেদ অভিযানের সময় ছাগলকাণ্ডের আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলটিসহ অন্যান্য গবাদিপশু সরিয়ে নেয়া হয়
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ